9.4.09

Zakia Bari Momo

খুশিতে টানা দুইরাত ঘুমাতে পারিনি: জাকিয়া বারী মম

Momo27গেল বছরের 'শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী' হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার লাভ মম'র কেরিয়ারে যোগ করেছে নতুন পালক। তার সঙ্গে নানা প্রসঙ্গে কথোপকথনে মীর সামী।

'দারুচিনি দ্বীপ' ছবিতে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার পেলেন। কেমন লাগছে?

মম : পুরস্কার পেলে তো সবারই ভালো লাগে। আমারও দারুণ লাগছে। আমি যারপরনাই খুশি। চলচ্চিত্র জুরি বোর্ডের কাছে আমি অনেক কৃতজ্ঞ। যে কোনো পুরস্কারই ভালো কাজের একটা প্রেরণা জাগায়। এবারের চলচ্চিত্র পুরস্কার আমার জন্য অনেক বেশি আনন্দের। দারুচিনি দ্বীপ ছবিতে আমি 'জরি' নামের এক সহজ, সরল এক মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছি। এই ছবিটি তৈরি করা হয়েছে হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস 'দারুচিনি দ্বীপ' অবলম্বনে। এটি পরিচালনা করেছেন তৌকির আহমেদ। এ ছবির মাধ্যমে আমি চলচ্চিত্রে নায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করি। আমি মনে করি, এবারের এই পুরস্কারটি আমাকে কাজের প্রতি আরো বেশি মনোযোগী করে তুলবে। এই পুরস্কার আমার চলার পথের পাথেয় হিসেবে থাকবে।

যেদিন পুরস্কারটি ঘোষণা করা হয়েছিল সেদিনের অনুভূতি কেমন ছিল?

মম : প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না, আমি সেরা নায়িকা হয়েছি। তারপরে মনে মনে আমি অনেক ধন্যবাদ দিয়েছি ছবির সব কলা-কুশলীদের। এরপর আমি প্রথমে ফোন করি তৌকির ভাইকে। তিনি ফোন ধরার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে শুভেচ্ছা জানান। তখন আমার বিশ্বাস হয়েছে যে, আমি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাচ্ছি। এরপর টানা দুইরাত ঘুমাতে পারিনি। এই পুরস্কার পেয়ে আমি সত্যিই অনেক বেশি খুশি হয়েছি। আর ধন্যবাদ জানাতে চাই এই ছবির সকল কলা-কুশলীদের এবং আমার দর্শক, যারা আমার ছবিটি দেখেছেন। আমি মনে করি, একজন অভিনেত্রী হিসেবে এই দেশ আমাকে যে সম্মান করলো, সেটা আমার কাছে অনেক বেশি মর্যাদার। আমি তাদের এই সম্মান ধরে রাখার এবং তাদের প্রত্যাশা পুরণ করার চেষ্টা করবো।

প্রথম ছবিতেই এতো বড় সাফল্য পেলেন। এরপরেও আর নতুন কোনো ছবিতে আপনাকে দেখা যাচ্ছে না কেন?

মম : আমি মনে করি ছবিতে অভিনয় এবং নাটকে অভিনয় দুটো পুরোপুরি আলাদা বিষয়। দারুচিনি দ্বীপে অভিনয় করার পর অনেক ছবিতে অফার পেয়েছি। আমি আসলে ভালো মানের ছবিতে অভিনয় করতে চাই। ভালো কোন পরিচালক এবং ভালো চরিত্রের দেখা পেলে আবারো ছবিতে অভিনয় করবো।

তার মানে আপনি বিকল্প ধারার কথা বলছেন?

মম : আসলে আমাদের ছবিতে মূল ধারা বা বিকল্প ধারা বলতে কোন কিছু নেই। সব ছবিই আমার কাছে মনে হয় ছবি।

চলচ্চিত্রে কিভাবে এলেন?

মম : আমি চলচ্চিত্রের নায়িকা হব এমন কোন ভাবনা আমার কোন কালেই ছিল না। আমি যখন লাক্স সুপারষ্টার হই তখন লাক্সের সাথে আমার একটা চুক্তি হয় ছবির নায়িকা হবার। এভাবেই আমি প্রথন ছবি দারুচিনি দ্বীপে অভিনয় করি।

আপনার শুরুর দিকটা?

মম : ছোটবেলা থেকেই আমার অভিনয়ের প্রতি দারুণ আগ্রহ ছিল। সবসময় আমি মনে মনে এই স্বপ্নকে লালন করতাম। পরে যখন মৌ আপুর (সাদিয়া ইসলাম মৌ) নাচের স্কুল নৃত্যলোকে ভর্তি হই, তখন একদিন কথায় কথায় আপুকে আমার অভিনয়ের আগ্রহের কথা বলে ফেলি। তিনি একদিন আমাকে বললেন, "তোর এতো অভিনয়ের আগ্রহ, তাহলে মিনহাজুর রহমান কাজী নজরুল ইসলামের একটি নাটক বানাবেন সেখানে তুই অভিনয় কর।" নাটকের নাম মেহেরনিগার। এই নাটকে আমি নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছি। এখানে আমার বিপরীতে অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান। তারপর থেকে নানা নাটকে অভিনয় করেছি। আমি প্রথম থেকে বলেছি যে, ভালো চরিত্রে কাজ করব। ফলে তখন থেকে আমি খুব বেশি নাটকে অভিনয় করিনি। বেছে বেছে কাজ করেছি।

আর লাক্সে আসা?

মম : লাক্স-এ আসব এমন কোন ভাবনা আমার ছিল না। আমার ছোট ভাই মনন একদিন বাবাকে বলল, "আপুর তো অভিনয় করার অনেক শখ। ওকে লাক্সে রেজিষ্ট্রেশন করতে বল।" এরপর বাবা রেজিষ্ট্রেশন করার কথা বলেন। আমি তার কথাকে কোন গুরুত্ব দেইনি। উল্টো তাকে বললাম, "আব্বা এসব লাক্স-ফাক্স করে কোনো লাভ হবে না।" এসব বলে টলে তো আমি চলে গেছি আমার ক্যাম্পাসে (জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়)। বাবা আবারও বললেন, "এখানে তোমার নাম লেখাও।" আসলে, আমি বাবার কথাতেই এই প্রতিযোগিতায় নাম লেখাই। যেদিন প্রতিযোগিতার জন্য দেখা করতে গিয়েছি সেদিন আমি আমার চেয়েও অনেক সুন্দর সুন্দর মেয়ে দেখেছি। ফলে আমি আবারও চলে আসতে চাই। কিন্তু এবারও বাধা দিলেন আমার আব্বা। কীভাবে কীভাবে আমি লাক্স-চ্যানেলআই সুপারষ্টার হলাম সে কাহিনী সবার জানা। যেহেতু লাক্সের সাথে আমার একটা চুক্তি ছিল 'দারুচিনি দ্বীপ' ছবির নায়িকা হবার ফলে আমি সেই ছবির নায়িকা হই।

আবার নাটকে নিয়মিত হলেন কবে?

মম : ছবির চুক্তি শেষ হয় '০৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। এরপর থেকে আমি নিয়মিত নাটকে অভিনয় করছি।

এখন কী কী কাজ করছেন?

মম : এখন আমি বেশ কটি একপর্ব ও ধারাবাহিকের কাজ করছি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- গোলাম সোহরাব দোদুলের 'সোয়া পাঁচ বাই আড়াই লেন', এজাজ মুন্নার 'নীড়', সাইফুল ইসলাম মান্নুর 'কারো কোন নীতি নেই', বাদল খন্দকারের 'শুভ্র', কৌশিক শংকর দাশের 'তোমার কথা আমার কথা', শেখ নজরুল ইসলামের 'বাঘারু', শাহ আমির খশরুর টেনিস খেলোয়াড়দের নিয়ে তৈরি একটি নাটকে। বেশ কয়েকটি ঈদের নাটকেও অভিনয়ের কথা চলছে।

যদি লাক্সের মাধ্যমে নায়িকা না হতেন তবে আপনার জীবনের লক্ষ্য কী ছিল?

মম : ছোটবেলা থেকে 'পাইলট' হবার ইচ্ছেটা আমার খুব বেশি ছিল। তখন আমার মনের মধ্যে এক ধরনের ভাবনা কাজ করত। ভাবতাম, পাইলট হলেই বুঝি সবসময় আকাশে আকাশে পাখির মতো ঘুরে বেড়ানো যাবে। এরপর আস্তে আস্তে এই ইচ্ছোটা কমে যেতে থাকে। তারপর মনের মধ্যে ইচ্ছে জাগে আর্কিটেক্ট হবার। ধীরে ধীরে এটাও মরে যায়। তারপর আমি হতে চাই সংস্কৃতি কর্মী। যেই ভাবনা থেকেই আমি নাটক ও নাট্যকলায় ভর্তি হই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে।

এই যে নাটক ও নাট্যতত্ত্বে পড়ছেন, এটা কি আপনার অভিনয়ে কোন প্রভাব ফেলে?

মম : এই বিভাগে অনেক বিষয় আছে। যার মধ্যে একটি অভিনয়। তো একটু তো প্রভাব ফেলবেই। এটাই তো স্বাভাবিক।

একটি সৌন্দর্য সাবানের পর নতুন কোনো বিজ্ঞাপনের কাজ করছেন?

মম : না, আপাতত নতুন কোনো কাজ করছি না। তবে কথা চলছে।

নতুন কোন ছবিতে অভিনয় করছেন?

মম : না. এখনো ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হইনি।

অভিনয় নিয়ে আপনার লক্ষ্য?

মম : আমার লক্ষ্য খুবই সোজা। আর সেটা হলো নিজেকে একজন পরিপূর্ণ অভিনেত্রী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা।


সুত্র - গ্লিটস/৫ নভেম্বর ২০০৮

No comments:

Post a Comment