6.4.09

Majedis Shahid Fahad

ক্যামেরা তো বাঘ-ভাল্লুক না যে আমাকে খেয়ে ফেলবে : মাজেদিস শাহীদ ফাহাদ

InterViewFahad'মনে কর যেন বিদেশ ঘুরে, মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দুরে ...' কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'বীরপুরুষ' কবিতার এই দুই পংক্তিকে ঘিরে হুইল পাউডারের সেই দারুণ বিজ্ঞাপনটি কে না দেখেছে! কী সুন্দর ফুটফুটে একটি ছেলে মায়ের প্রতি যার কতই না অভিমান! তারপরও মায়ের স্বপ্ন, সে পারবেই । এমন আবেগময় বিজ্ঞাপন হাজারো দর্শকের মন জয় করেছে। কিন্তু আমরা ক'জনই বা জানি এই বীরপুরুষের কী নাম, কী তার পরিচয়।

ইতিমধ্যেই তিনি ৪০টিরও বেশি নাটক এবং টেলিফিল্মে অভিনয় করেছেন। আর সাড়া জাগানো শিশুতোষ সিনেমা 'দুরত্ব'- এ অভিনয়ের মাধ্যমে নিজের অভিনয় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন কিশোর মাজেদিস শাহীদ ফাহাদ।

খিলগাঁও গভনমের্ন্ট হাই স্কুলের অষ্টম শ্রেণী ছাত্র ফাহাদ জানিয়েছেন নানা বিষয়ে তার ভাবনা, আগামী দিনগুলো সম্পর্কে নিজস্ব কথামালা...।



কেমন আছেন?

ভালো, অনেক ভালো।

পড়ালেখা কেমন চলছে? কোন ক্লাশে পড়ছেন?

ভালো, চলছে। ৮ম শ্রেণীতে পড়ছি।

প্রথম কাজ করেন কিসে- মডেলিং নাকি সিনেমাতে?

মডেলিংয়ে, একটি পত্রিকার মডেল হিসেবে। পত্রিকাটি এখন নেই। তারপর নাটকে। পরে চলচ্চিত্রেও কাজ করেছি।

প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর অনুভূতি কেমন?

প্রথমে তো ভয় ভয় লাগে। সবারই লাগে। তারপরও আমার বিশ্বাস ছিল, আমি পারবই। ক্যামেরা তো বাঘ-ভাল্লুক না যে আমাকে খেয়ে ফেলবে!

অভিনয় জগতে আসার পেছনের কথাগুলো বলবেন কি?

তখন তো অনেক ছোট ছিলাম। যখন বিদেশী সিনেমাগুলো দেখতাম, বাচ্চাদের সিনেমা, তখন খুব চিন্তা হতো- আমাদের দেশে যদি এমন সিনেমা বানানো যেত, তাহলে কতোই না মজা হতো। মনে মনে চাইতাম তাদের মতো অভিনয়শিল্পী হওয়ার। হয়তোবা সেজন্য এ জগতে আসা।


কোন জগতে নিয়মিত হওয়ার ইচ্ছা?

মিডিয়ার সব জগতেই কাজ করতে চাই। অবশ্য যদি তা মানসম্মত হয়। আমি চাই ভালো কাজ করতে। কোথায় অভিনয় করলে বেশি সম্মানী পাবো এটা আমার দেখার বিষয় নয়। ভালো কাজ হলে সম্মানী ছাড়াও করতে রাজি আছি। কিন্তু ভালো কাজ চাই। যার মাধ্যমে দর্শক আমাকে মনে রাখবে চিরকাল।

শোবিজ জগতে আসার পেছনে কার অবদান বেশী?

মা'র। মা যদি উৎসাহ না যোগাতেন, তাহলে হয়তো বা এই জগতে আসতেই পারতাম না।

এদেশে শিশুতোষ চলচ্চিত্র তৈরীতে প্রধান সমস্যা কি?

দাতারা সব সময় লাভ লোকসানের চিন্তা করেন এবং লোকসানের কোন ব্যয়ভার বহন করতে চান না। তারা মনে করেন, শিশুদের জন্য কোন ফিল্ম করা মানেই লোকসান দেয়া। তাদের এ চিন্তাই মূলত শিশুতোষ সিনেমা তৈরীর ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধক। আমি মনে করি, এজন্য নির্মাতাদের উদার হসে- এগিয়ে আসা উচিত।

বাংলাদেশের কোন কোন পরিচালক শিশুদের নিয়ে বেশি ভাবেন এবং বেশি কাজ করেন বলে আপনার মনে হয়...

হাতেগোনা কয়েকজন চলচ্চিত্র নির্মাতা খুঁজে পাওয়া যাবে। তাদের মধ্যে সর্বপ্রথম যার নাম উচ্চারিত হয় তিনি মোরশেদুল ইসলাম । আমার মনে হয়, তিনি অন্যান্য পরিচালকদের তুলনায় শিশুদেরকে নিয়ে বেশি চিন্তা করেন। বাংলাদেশের মতো একটি দেশে শিশুদের জন্য পরপর দুটি সিনেমা নির্মাণ করেন এবং সারাদেশের শিশুদের একত্র করে সাতদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক মানের শিশু চলচ্চিত্র উৎসব বাস্তবায়ন করে তিনি শিশুদের প্রতি তাঁর ভালবাসার বর্হিপ্রকাশ দেখিয়েছেন। যা অন্য কোনো পরিচালক হয়তো চিন্তাই করেননি।


আপনার অভিনয় গুরু কে?


হানিফ খান। তাঁর প্রেরণায় আজ আমি এ জগতে আসতে পেরেছি।


শোবিজ অঙ্গনে কাজ করতে এসে বন্ধুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে নাকি কমেছে?

বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে অনেকটা ফ্রি ছিলাম এখন শোবিজে কাজ করার কারণে সারাদেশের বন্ধুদের ফোনের পর ফোন আমাকে সারাদিন ব্যস্ত রাখে। সবাইকে বেশি আপন ভাবার কারণেই হয়তো এ অবস্থা।


অভিনয় করে লেখাপড়া ঠিক রাখেন কিভাবে?

যখন শুটিং এ যাই তখন সাথে বই নিই। শুটিংয়ে যখন অবসর পাই তখন একটু বইয়ে চোখ বুলাই। তারপরও শুটিং শেষে বাড়ি ফিরে রাত ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত পড়ালেখা করি। আমার শিক্ষকরাও আমাকে ছেলের মত মনে করেন। শুটিংয়ের কারণে আমি যদি কোনোদিন ক্লাশে অনুপস্থিত থাকি তাহলে পরের দিন তারা আমাকে সেসব পড়া তৈরী করে দেন।


'দুরত্ব' সিনেমাতে অভিনয়ের অনুভুতি কেমন?

শুটিংয়ে অনেক মজা করেছি আমরা। পরিচালক মোরশেদ আংকেল অনেক ভাল মানুষ ও খুবই ফ্রেন্ডলি।


'দুরত্ব' সিনেমায় অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে কোন পুরষ্কার পেয়েছেন?

হ্যাঁ, বাচস (বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংসদ) থেকে 'দুরত্ব'-এ অভিনয়ের জন্য সেরা শিশুশিল্পী হিসেবে এবং দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আরও চার-পাঁচটি পুরষ্কার পেয়েছি। এতে অভিনয়ের জন্য আমাকে জাপানের একটি চলচ্চিত্র উৎসব থেকে জাপান সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়।

সিনেমাতে অভিনয় করতে গিয়ে কি কোন মজার ঘটনা ঘটেছে?

জীবনে কখনো পানিতে নামিনি এবং ট্রেনেও চড়িনি। কিন্তু সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে আমাকে পানিতে নামতে হয়েছে। এমনকি ট্রেনে চড়ার মজাও আমি সিনেমার শুটিংয়ে পেয়েছি। আর সিনেমাতে আমার চরিত্র ছিল টোকাইয়ের। আশেপাশে যারা শুটিং দেখছিল তারা আমাকে সত্যিকারের টোকাই মনে করেছিলো। এ বিষয়গুলোই আমি খুবই উপভোগ করেছি। যা মনে থাকার মত।

সম্প্রতি কোন অফার পেয়েছেন কি?

পেয়েছি। নাম চূড়ান্ত না হওয়া দুটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের কথা চলছে। 'জলছাপ' সিনেমার ডাবিং শেষ করলাম। একটি বিজ্ঞাপনে কাজের কথাও চলছে। সেভেন রিংস সিমেন্টের একটি বিজ্ঞাপন চলছে টিভিতে।

ভবিষ্যত স্বপ্ন কী?

স্থপতি বা ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই। আর নিয়মিত অভিনয় করব।

সুত্র - গ্লিটস/৬ জুলাই ২০০৮

No comments:

Post a Comment