7.4.09

Fazlur Rahman Babu

অভিনয়কে এখনও আমি ভালবাসি : ফজলুর রহমান বাবু

FazrulRahmanBabu31 গেঞ্জি পরে, মুখে হালকা মেকআপ তিনি নিয়ে বসে আছেন। আর পরিচালককে মাঝে মাঝে বলছেন কোন অ্যাঙ্গেলে, ক্যামেরার কোন পজিশনে, কিভাবে শট নিলে ভাল হতে পারে। না চেনা থাকলে মনে হওয়াটা খুব স্বাভাবিক যে, এই ভদ্রলোকই বুঝি পরিচালক! তবে কিছুক্ষণ পরই তিনি নেমে গেলেন অভিনয়ে। আপাদমস্তক অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু কী টেলিভিশন কী মঞ্চ- দুই মাধ্যমেই অবাধে বিচরণ করেন। উত্তরার শুটিং হাউজ 'শিশির'-এ একটি মেগা ধারাবাহিকের শুটিং চলার ফাঁকে তার এই সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করা হয়েছে।

কেমন আছেন বাবু ভাই?
জ্বি, বেশ ভালো আছি।

এখন কোন নাটকের শুটিং করছেন ?
আনিসুল হকের রচনা ও আশরাফী মিঠুর পরিচালনায় ধারাবাহিক নাটক 'দৈনিক তোলপাড়' এ কাজ করছি। এর আগে সাখাওয়াত আল মামুনের পরিচালনায় ২৬ পর্বের ধারাবাহিক 'ইসকুল' নাটকে একজন খারাপ প্রকৃতির চেয়ারম্যানের চরিত্রে অভিনয় করেছি। যে গ্রামের সাধারণ মানুষকে নির্যাতন করে, বিভিন্নভাবে ঠকায়। মানে পুরোপুরি একটি নেগেটিভ চরিত্র। এ নাটকটির শুটিং সম্প্রতি শেষ হয়েছে।

এই নাটকে তো আপনি একজন বিনোদন সাংবাদিক?
'দৈনিক তোলপাড়' নাটকে আমার চরিত্রটি একজন বিনোদন সাংবাদিকের। 'বাবু' যা আসলে আমার প্রকৃত নাম সেটাই এ নাটকে আমার নাম হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে, যে 'তোলপাড়' নামের দৈনিকে বিনোদন সাংবাদিক হিসাবে কাজ করে। অফিস চলাকালে সে তার অন্যান্য কলিগদের সাথে মিলে নানা ধরণের মজার ঘটনা ঘটায়। এটি একটি কমেডিধর্মী নাটক।

আপনার অভিনয় জীবনের শুরু কিভাবে?
Fazlur Rahman Babu 31 আমার এক আত্নীয় ফরিদপুরের নাট্য সংগঠক হিসাবে কাজ করতেন। তিনি একদিন আমাকে নিয়ে গেলেন ফরিদপুরের এক নাট্যদলে। তাদের কাজ দেখে আমার আগ্রহ জন্মালো। এভাবে কয়েকদিন যেতে যেতে আগ্রহটা অদম্য হয়ে উঠল। সময় বুঝে যোগ দিলাম। সেটা '৭৯ সালের কথা। '৮৩ তে যোগ দেই ঢাকার নাট্য সংগঠন 'আরণ্যক'-এ । তারপর থেকে ধীরে ধীরে নাটকের সাথে জড়িয়ে পড়ি। একসময় এটাকেই পেশা হিসাবে গ্রহণ করি। আর আমার টেলিভিশনে প্রথম পদার্পণ '৯২ সালে কাজী নজরুল ইসলামের উপন্যাস 'মৃত্যুক্ষুধা' অবলম্বনে তৈরি একটি নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে।

আপনি তো মঞ্চ এবং চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। দীর্ঘদিন আপনাকে এসব ক্ষেত্রে দেখা যায় না। এর কারণ কী?
আসলে টেলিভিশন নাটকে বেশি সময় দেয়ার কারণে মঞ্চে কাজ করার সময় হয়ে ওঠে না। তবে খুব শীঘ্রই আরণ্যকের হয়ে একটি নতুন নাটকে কাজ করার কথা রয়েছে। আর চলচ্চিত্রে কাজ করছি বেছে বেছে। গিয়াসউদ্দিন সেলিমের চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় 'মনপুরা' তে আমি অভিনয় করেছি। ভালো কাজ এলে অবশ্যই অভিনয় করব।

'মনপুরা'য় কোন চরিত্রে অভিনয় করছেন?
এখানে আমি একজন সাধারণ জেলের চরিত্রে অভিনয় করেছি। গ্রামে যার অল্প কিছু জমিজমা আছে। এই জমির আয় আর মাছ ধরার আয় দিয়ে সে ও ও তার মেয়ে-এই দুইজনের দিন কায়ক্লেশে চলে যায়। জেলের মেয়ের নাম মিলি। যে শেষপর্যন্ত মারা যায়। গ্রীক পুরাণের একটি কাহিনী অবলম্বনে এই চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য তৈরি করেছেন সেলিম। ছবির বাকিটা রিলিজ হলে জেনে নেবেন!

মঞ্চ, টেলিভিশন এমনকী চলচ্চিত্র-এই প্রতিটি ক্ষেত্রেই আপনি সমানভাবে সফল। এর রহস্য কি?
আসলে এর মাঝে তেমন কোন রহস্য নাই। একজন অভিনেতাকে সবধরণের চরিত্র সফলভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্যে চেষ্টা করতে হয়। আর আমি সেই কাজটি করার জন্যে সবসময় চেষ্টা করি। এই চেষ্টা ছাড়াও নিয়মিত অনুশীলন ও নাটক নিয়ে ভাবনা এবং কঠোর পরিশ্রম-এই তিনটি বিষয়ে মনোযোগই আমাকে চরিত্রগুলো ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করে। আমি মনে করি, যেকোনো অভিনেতারই অভিনয়ের এই তিন রসায়নের দিকে অত্যন্ত মনোযোগ দেয়া উচিত।

আমাদের নাটকের বর্তমান অবস্থা কেমন?
বাংলাদেশের নাটকে কিছু বিচ্ছিন্ন সমস্যা থাকলেও সামগ্রিকভাবে এই শিল্পের অবস্থা বেশ ভালো। আর এখন তো অনেক নতুন শিল্পী আসছে। নিয়মিত কাজ করছে। ফলে নাটক তার গতি হারাচ্ছে না।

আপনি অনেক প্রবীণ অভিনেতার সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন আর বর্তমানে কাজ করছেন নবীনদের সাথে। অর্থাৎ দুই জেনারেশনের কাজের ধরণ সম্পর্কে আপনি অবগত। এই দুই জেনারেশনের মধ্যে কি ধরণের পার্থক্য রয়েছে?
আসলে প্রবীণ অভিনেতারা টেলিভিশনে কাজ করার আগে মঞ্চে কাজ শিখে আসতেন। তাদের ত্যাগী মনোভাব, সময়জ্ঞান, কাজের প্রতি আগ্রহ- তাদের কাজগুলোকে অনেক বেশি আর্টিস্টিক করতো। আর এখন তো নানা ধরণের বিউটি কম্পিটিশন, স্টার হান্ট পদ্ধতিতে শিল্পী নির্বাচন করা হয়। তাদের কেউ কেউ ভাল হলেও বেশিরভাগই দেখা যায় অভিনয় সমন্ধে তেমন কোন ধারণা রাখে না। ফলে নাটকের মান কমে যায়। তাই আমার মতে, নতুনদের সবাই অভিনেতা বা অভিনেত্রী নন।

এসময়ের নাটক নিয়ে আপনার কোন চিন্তা-ভাবনা আছে কি?
নাটক তো আসলে সমাজের দর্পণ। আর আমি একজন অভিনয়শিল্পী মাত্র। তাই এই শিল্প নিয়ে চিন্তা-ভাবনা বলতে আমি ভালো অভিনয় করা- এটাকেই বুঝি। ভালো চরিত্র পেলে সেই চরিত্রের ভেতরে ঢুকে ভালোভাবে করলে আর সর্বোপরি নিজের কাজটি ঠিকভাবে করলে তা এই শিল্পের কাজে আসবে।

নিশ্চয়ই জানেন, আবদুল্লাহ আল মামুন অসুস্থ...।
তিনি আমাদের অগ্রজ। সত্যি বলতে কি, তার কাজ আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। এক অর্থে বলা যায় মামুন ভাইয়ের হাত ধরেই টেলিভিশন নাটকে আমার শুরু। তিনি আমাকে বিটিভিতে তালিকাভুক্ত করতে অনেক সাহায্য করেছেন। তার নাটক 'শীর্ষবিন্দু'তে আমি অভিনয় করেছি। আমি তার সম্পর্কে এখনই স্মৃতিচারণ করতে চাই না। আমি চাই তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসুন।

আপনাদের সময়ের অনেকেই এখন নির্মাতা, প্রযোজকের খাতায় নাম লেখাচ্ছেন। আপনার এ ধরণের কোনো পরিকল্পনা আছে?
সময়ই বলে দেয় আসলে কী হবে। তবে নির্মাতা বা প্রযোজক অথবা পরিচালক-এই তিনটির কোনোটিই হওয়ার তেমন কোন ইচ্ছা আমার নেই। এধরণের কোন চিন্তা-ভাবনাও এখনো করিনি। আরও বেশ কিছুদিন অভিনয় করতে চাই। কারণ অভিনয়কে এখনও আমি ভালবাসি, অভিনয় আমাকে এখনও টানে।


এত ব্যস্ততার মধ্যে পরিবারের জন্যে কিভাবে সময় বের করেন ? এনিয়ে কখনও কোন সমস্যায় পড়েছেন?
আমি একজন পেশাদার অভিনেতা। নাটকই আমার পেশা। আর পেশার ক্ষেত্রে পরিবার থেকে কোনো ধরণের বাধার প্রশ্ন আসে না। অন্তত আমি তাই মনে করি। আর ব্যস্ততার জন্যে মাঝে মাঝে কিছু পারিবারিক সমস্যা প্রত্যেক পেশাতেই হয় । আমার ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য। তবে এটা এমন কিছু নয়।

এবার আপনার সন্তানদের নিয়ে কিছু বলুন। তাদের নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আমার দুই মেয়ে- অবন্তী ও প্রিয়ন্তী। ওরা এখনও ছোট, লেখাপড়া শেষ করেনি। তবে নাটকের চাইতে সঙ্গীতের প্রতিই ওদের বেশি আগ্রহ। বড় হয়ে ওরা নাটক, সঙ্গীত বা অন্যকিছু মানে যেক্ষেত্রে ওদের আগ্রহ বেশি সেখানেই যাবে। তাতে আমার কোনো আপত্তি থাকবে না।


সুত্র - গ্লিটস/৩১ জুলাই ২০০৮

No comments:

Post a Comment