9.4.09

Shirshendu Mukharjee

আমার পছন্দ অ্যাকশন আর রোমান্স: শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

sersendu-01-30-11.jpgশীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় নস্যি নিতে ভালোবাসেন। কথা-বার্তার ফাঁকে ফাঁকে তিনি প্রায়ই একটা ছোট প্লাস্টিকের কৌটা থেকে বার বার একচিমটি নস্যি নিয়ে সেটা নাকের ভেতর পাস করে দিচ্ছিলেন। তারপর চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিচ্ছিলেন জোরে। এই নেশায় আসক্ত, খালি গায়ে, ধুতি পরা প্রখ্যাত ভারতীয় লেখকের সঙ্গে ওমর শাহেদের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয় শাঁখারিবাজারের একদম শেষদিকে এক পুরনো তিনতলা বাড়িতে। যেটার দোতলায় এক ছোট্ট বারান্দায় বসে গৌরবর্ণের এই লেখক, সাংবাদিক জানিয়েছেন নানা বিষয়ে তার মতামত। বাড়িটিতে ঢুকতেই সাইনবোর্ড লাগানো আছে, 'ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গ, ঢাকা মহানগরী শাখা'। শীর্ষেন্দু যে অনুকূলচন্দ্রের শিষ্য সে কথা তার ভক্ত পাঠকরা ইতোমধ্যে জানেন নিশ্চিত। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করা হয়েছে ২১ নভেম্বর, '০৮ সালে।

গ্ল্লিটজ : আপনার কোন কোন উপন্যাস, গল্প নিয়ে সিরিয়াল বা নাটক হয়েছে?
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় : এপার বাংলায় অম্লান বিশ্বাস বানাচ্ছে 'যাও পাখি'। এছাড়াও চোখ, দূরবীন, জাল নিয়ে সিরিয়াল হয়েছে।

গ্লিটজ : আপনি টিভি কেমন দেখেন?
শীর্ষেন্দু : প্রচুর। কাজের প্রযোজনে এবং অবসরে আমি অনেকক্ষণ টিভি দেখি।

গ্লিটজ : টিভিতে কী কী দেখেন?
শীর্ষেন্দু : আমি বেশি দেখি কার্টুন। এছাড়াও ছবি দেখি, সিরিয়াল দেখি।

গ্লিটজ : কার্টুনের মধ্যে সবচেয়ে ভালো লাগে কোনটা?
শীর্ষেন্দু : অবশ্যই 'টম এন্ড জেরি'।

tom-and-jerry-30-11.jpg

গ্লিটজ : আর কাজের প্রযোজনে কোন কোন চ্যালেন দেখেন?
শীর্ষেন্দু : নিউজ চ্যানেলগুলোই বেশি দেখা হয়। এর মধ্যে 'টাইম নাউ', সিএনবিসি, বিবিসি-ই বেশি দেখি।

গ্লিটজ : আপনি তো 'দেশ' পত্রিকায় কাজ করেন। সেখানে আপনার পদ কী?
শীর্ষেন্দু : আমি দেশে অ্যাসিসেন্ট এডিটর হিসেবে কাজ করি।

গ্লিটজ : আপনাকে কী ধরণের কাজ করতে হয়?
শীর্ষেন্দু : এখন তো নানা রকম ফিচারই বেশি লিখি। আর ফরমায়েশী লেখাগুলোও লিখতে হয়।

গ্লিটজ : 'দেশ' তো বাংলাদেশে খুব বেশি বিক্রিত ম্যাগাজিন। আপনারা কি এদেশে এই পত্রিকা কিভাবে চলবে, সে অনুযায়ী পত্রিকায় কী থাকবে সেটা ভাবেন?
শীর্ষেন্দু : সম্পাদকরা সেটা নিয়ে প্রচুর চিন্তা-ভাবনা করেন।

গ্লিটজ : সেটা কী ধরণের?
শীর্ষেন্দু : যাতে এমন কোনো স্পর্শকাতর বিষয় না থাকে যাতে বাংলাদেশের মানুষের সেন্টিমেন্টে আঘাত করবে- সেটা নিয়ে তারা খুব ভাবেন।

গ্লিটজ : আপনার কি এদেশে বন্ধু-বান্ধব আছেন?
শীর্ষেন্দু : মিলনের (ইমদাদুল হক মিলন, লেখক) সঙ্গে যোগাযোগ হয়। আগে হুমায়ূনের (হুমায়ূন আহমেদ) সঙ্গে দেখা হতো। আমার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় এদেশের এক বন্ধু ছিল। নাম বশীর আল হেলাল। সে যখন বাংলা একাডেমীতে চাকুরি করতো, তখন খুব যোগাযোগ ছিল। এখন সবাই ব্যস্ত হয়ে গেছে।

গ্লিটজ : আপনার কী ধরণের সিনেমা পছন্দ?
শীর্ষেন্দু : অ্যাকশন আর রোমান্স।

গ্লিটজ : আর প্রিয় ছবি কোনগুলো?
শীর্ষেন্দু : 'বাইসাইকেল থিফ', 'অ্যাশেজ এন্ড ডায়মন্ড', 'চার্লি চ্যাপলিন', 'বেনহুর' আমার খুব ভালো লাগে।

গ্লিটজ : প্রিয় নায়ক-নায়িকা?
শীর্ষেন্দু : আমার তো সব পুরোনো দিনের নায়ক-নায়িকা পছন্দ। তোমরা কি তাদের চিনবে?

hepburn-30-11.jpg

গ্লিটজ : না চিনলেও বলেন। কোনো অসুবিধা নেই।
শীর্ষেন্দু : আমার পছন্দের নায়ক গ্রেগরি পেক। আর প্রিয় নায়িকারা হলেন-কিম নোভাক, রিটা হেওয়ার্থ, অড্রে হেপবার্ন।

গ্লিটজ : এখনকার বলিউডের কোনো ছবি ভালো লেগেছে?
শীর্ষেন্দু : এখন তো বলিউডে হাই স্ট্যান্ডার্ডের ছবি হচ্ছে। 'লাগে রাহো মুন্না ভাই' খুব ভালো লেগেছে।

গ্লিটজ : আপনার বলিউডের কারো অভিনয় পছন্দ হয়?
শীর্ষেন্দু : চ্যানেলে যেগুলো দেখায়, সেগুলো মাঝে মধ্যে দেখি। অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান, আমির, সালমান,অক্ষয়-এদের অভিনয় ভালো লাগে।

গ্লিটজ : আর বলিউডের প্রিয় নায়িকা?
শীর্ষেন্দু : মাধুরী, রাণী, দিয়া মির্জাকে ভালো লাগে।

গ্লিটজ : আচ্ছা টালিগঞ্জের কোনো খবর কি আপনি রাখেন?
শীর্ষেন্দু : ওখানে তো ভালো ছবি করে না।

গ্লিটজ : টালিগঞ্জের অবস্থা এতো খারাপ কেন?
শীর্ষেন্দু : আসলে পরিবেশ নেই। ভালো অভিনেতাও নেই।

rituporno-30-11.jpg

গ্লিটজ : আর পরিচালকরা কেমন?
শীর্ষেন্দু : ঋতুপর্ণ ঘোষ, গৌতম ঘোষ-এরা তো ভালো ছবি বানায়।

গ্লিটজ : অভিনেতা সংকট কেন?
শীর্ষেন্দু : যারা একটু চান্স পেয়েছে, তারা বম্বেতে চলে গেছে। ওই যে বিপাশা (বিপাশা বসু), রাণী (রাণী মুখার্জি)-এদের কথাই ধরো না।

rituporna-30-11.jpg

গ্লিটজ : এখনকার কারো অভিনয় ভালো লাগে?
শীর্ষেন্দু : ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তা অভিনয় ভালোই করে।

গ্লিটজ : আর বাংলা ছবিতে আপনার কাকে ভালো লাগে?
শীর্ষেন্দু : আমার তো সব পুরোনো আমলের নায়িকা পছন্দ। সন্ধ্যা রায়, দেবশ্রী প্রিয় নায়িকা।

গ্লিটজ : বাংলাদেশের কোনো ছবি দেখেছেন?
শীর্ষেন্দু : অনেকদিন এই বাংলার ছবি দেখা হয় না। আমাদের ওখানে তো পাওয়া যায় না।

গ্লিটজ : কারো ছবিই কি দেখেননি?
শীর্ষেন্দু : হুমায়ূন বছর তিনেক আগে তার তিনটা ছবি পাঠিয়েছিল। সেগুলো দেখেছি। এখন আর নাম মনে নেই।

গ্লিটজ : কেমন লেগেছে?
শীর্ষেন্দু : ভালো। ও তো খুবই ইন্টেলিজেন্ট।

গ্লিটজ : ভারতে বাংলা ছবির এতো বেহালদশার কারণ কী?
শীর্ষেন্দু : হিন্দি ভাষা, সিরিয়াল আর ছবির খুব উৎপাত। এটাই দায়ী।

গ্লিটজ : আপনি গান কেমন শোনেন?
শীর্ষেন্দু : মোটামুটি।

গ্লিটজ : কী ধরনের গান পছন্দ করেন?
শীর্ষেন্দু : রবীন্দ্রসঙ্গীত, রজনীকান্তের গান, নজরুলগীতি ভালো লাগে। sersendu-02-30-11.jpg

গ্লিটজ : কোন কোন শিল্পীর গান ভালো লাগে?
শীর্ষেন্দু : লতা মুঙ্গেশকর, ওর বোন (আশা ভোঁসলে) ওরা তো দারুণ গায়। হেমন্ত মুখার্জির গান খুব ভালো লাগে। আর তোমাদের দেশের শামা রহমান, বন্যার (রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা) গান খুব ভালো।

গ্লিটজ : নজরুলগীতি সম্পর্কে বলবেন না?
শীর্ষেন্দু : 'শাওন রাতে যদি' গানটা আমার খুব পছন্দ।

গ্লিটজ : কলকাতার যে জীবনমুখী গান সেটা সম্পর্কে আপনার মতামত কী?
শীর্ষেন্দু : সুমন (কবীর সুমন, সাবেক নাম সুমন চট্টোপাধ্যায়) অসম্ভব ভালো গায়। সে-ই সবচেয়ে ভালো গায়ক, পথপ্রদর্শক। সুমন খুব বড় কবিও। এই দিকে আসলে সে-ই পাওনিয়ার। নচিকেতাও ভালো গায়।

গ্লিটজ : আপনার স্ক্রিপ্ট নিয়ে কি কেউ ছবি বানিয়েছে?
শীর্ষেন্দু : ঋতুপর্ণই (ঋতুপর্ণ ঘোষ) তো বানিয়েছে 'গোঁসাইবাগানের ভূত', 'হিরের আংটি'। 'সাধুবাবার লাঠি' নিয়ে ছবি বানিয়েছে সঙ্গীতা বন্দোপাধ্যায় নামের এক নতুন পরিচালক।

গ্লিটজ : আপনার কাহিনী নিয়ে নতুনরা কাজ করছে। আপনার মতো বিখ্যাত লেখকের লেখা নিয়ে তো সবাই ছবি বানাতে পারে না...।
শীর্ষেন্দু : নতুনদের তো করতে দিতে হবে। ছবি না বানাতে পারলে পারবে না। কিন্তু দিতে তো হবে। আর আমি তো গণক নই যে আগে থেকে বুঝবো কারটা হবে, কারটা হবে না।

গ্লিটজ : অবসর কাটান কিভাবে?
শীর্ষেন্দু : ঘুমাই, টিভি দেখি।

গ্লিটজ : আমাদের দেশের কোন কোন জায়গা আপনার ঘুরতে ভালো লেগেছে?
শীর্ষেন্দু : চট্টগ্রাম, কক্সবাজার।

গ্লিটজ : এখানকার কোনো কিছু কি আপনার খারাপ লেগেছে?
শীর্ষেন্দু : তোমাদের নদীগুলো খুব নোংরা। পুরো বাংলাদেশটাই নোংরা হয়ে যাচ্ছে। সরকারের এই ব্যাপারে সচেতন হওয়া দরকার।

গ্লিটজ : আপনার কোন লেখাগুলো বেঁচে থাকবে বলে মনে করেন?
শীর্ষেন্দু : এটা তো এখন বলা যাবে না। ৪০ বা ৫০ বছর পর বোঝা যাবে।

গ্লিটজ : কোনো বিশেষ ধারণা থেকে লেখেন বা আপনার কোনো দায়বদ্ধতা আছে?
শীর্ষেন্দু : আমি মানুষের মুক্তির জন্য লিখি, কুসংস্কারের বিপক্ষে সংস্কারের জন্য লিখি।

গ্লিটজ : দিনে কতক্ষণ লেখেন?
শীর্ষেন্দু : কোনো কোনো দিন ১২/১৩ ঘন্টাও লিখতে হয়। আবার কোনোদিন একদমই লিখি না। কাজের চাপের ওপর লেখা নির্ভর করে।

গ্লিটজ : ক্রিকেট তো আপনার খুব প্রিয় খেলা। সৌরভের (সৌরভ গাঙ্গুলি) অবসর নেয়াকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
শীর্ষেন্দু : বয়স হয়ে গেছে। ৩৬/৩৭ বছর বয়েস হয়ে গেছে। তাই অবসর নিয়েছে।

গ্লিটজ : নিজের লেখা উপন্যাসগুলোর মধ্যে কোনটা বেশি প্রিয়?
শীর্ষেন্দু : সবগুলোই প্রিয়। তবে 'উজান'টা ভালো লাগে। ওইটাতে আমার ছেলেবেলার কথা আছে।

গ্লিটজ : আপনার কয় ছেলে-মেয়ে?
শীর্ষেন্দু : আমার দুই ছেলে-মেয়ে। ছেলের নাম সম্রাট। মেয়ে দেবলীনা।

গ্লিটজ : কী খেতে পছন্দ করেন?
শীর্ষেন্দু : ভাত আর মিষ্টি।

গ্লিটজ : আবার এখানে কবে আসবেন?
শীর্ষেন্দু : জানি না। তবে মার্চের দিকে আসতে হতে পারে।

গ্লিটজ : আপনার লেখায় ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের কথা থাকে কেন?
শীর্ষেন্দু : উনি আমার গুরুদেব। তাই আসেন।

সুত্র - গ্লিটস/৩০ নভেম্বর ২০০৮

No comments:

Post a Comment