একটি হলেও হলিউডের সিনেমা করব: টনি ডায়েস
'০৫ সাল, সিলেটে শুটিং করছিলেন টনি ডায়েস। হঠাৎ রাতের বেলা ফোন করলেন পরিচালক নার্গিস আক্তার। জানালেন, তিনি টনিকে দিয়ে সিনেমা করাতে চান। টনিও রাজি হয়ে গেলেন। কিন্তু শর্ত দিলেন- যদি তার গল্প পছন্দ হয় এবং ছবিটি যদি বানিজ্যিক ধারার হয় তাহলেই তিনি অভিনয়ে রাজি। ব্যাটে-বলে মিলে গেল এবং টনি অভিনয় করলেন নরেন্দ্রনাথ মিত্র'র গল্প 'রস' অবম্বনে নির্মিত 'পৌষ মাসের পিরিত' ছবিতে। তারপর তিনি অফার পেলেন এইডস'র উপর সচেতনতামূলক ছবি 'মেঘের কোলে রোদ'-এ। অভিনয়ও করলেন চমৎকার। এবারে তার সাক্ষাৎকার। নিয়েছেন আহমেদ সাব্বির।
গত সপ্তাহে মুক্তি পেল আপনার অভিনয় করা 'মেঘের কোলে রোদ' ছবিটি। কেমন লাগছে?
খুবই ভাল। ছবিটি যখন মুক্তি পায় ভেতরে ভেতরে একটি উত্তেজনা কাজ করছিল। ছোটবেলা থেকে ছবি দেখি তো, তাই এই ছবির প্রতি আলাদা একটা আগ্রহ ছিল।
ছবি দেখার অভিজ্ঞতার কথা যদি বলেন...।
সিনেমা হলে গিয়ে আমার প্রথম দেখা ছবি 'নিশান'। তাও আবার বাবা-মা সহ আমাদের পরিবারের সবাইকে সাথে নিয়েই। সেদিন কী যে আনন্দ লাগছিল তা বোঝানো সম্ভব নয়। পাশাপাশি কলকাতাসহ বাইরের সব ছবিই দেখতাম সেই ছোটবেলা থেকে। এমন কি সে সময় অমিতাভ বচ্চনের সবগুলো ছবিই ভিসিডিতে দেখেছিলাম। খুব ভাল লাগত। এর পরেই নাটকে অভিনয় শুরু করলাম। নাটকে কাজ করলেও সিনেমার প্রতি ছিল আমার আলাদা দূর্বলতা। ঢাকার সব হলের সামনে গিয়ে 'মেঘের কোলে রোদ' এর ব্যানার দেখে এসেছি। খুব উত্তেজনা কাজ করছিল। ছোটবেলায় যেখানে রাজ্জাক, সালমান শাহসহ বড় বড় অভিনেতাদের ছবির ব্যানার দেখতাম, সেখানে নিজের ছবি দেখে খুব আনন্দ লাগছিল।
আমাদের চলচ্চিত্রাঙ্গনের সার্বিক অবস্থা কেমন মনে হচ্ছে?
আমি তো ভাই ফিল্মের লোক না, তাই ভালো করে বলতে পারছি না। যদি দর্শক হিসেবে জিজ্ঞেস করেন তাহলে বলব, আমাদের চলচ্চিত্রাঙ্গনে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে কারিগরি ত্রুটি। আমি ফিল্ম বলতে বুঝি হলিউডের ছবি, বলিউডের ছবি এবং কলকাতার ছবি। তাদের মত অবস্থায় আসতে হলে আমাদেরকে সবার আগে কারিগরি দিকটা উন্নত করতে হবে। শুধুমাত্র ৩৫ মিলিমিটার ক্যামেরা দিয়ে শুটিং করলেই সিনেমা তৈরি হয় না। এর জন্য ভালো গল্প ও চিত্রনাট্য দরকার। তাহলেই ভালো ছবি নির্মাণ সম্ভব।
কিছুদিন ধরে ছোটপর্দায় আপনাকে আগের চেয়ে অনেক কম দেখা যাচ্ছে। এর কারণ কী? ছোটপর্দার এখনকার পরিস্থিতি নিয়ে বলুন।
সত্যি বলতে কি, ২ কী ৩ বছর ধরে একটু কাজ কমিয়ে দিয়েছি। নাটক, সিরিয়াল সবকিছুই কম করেছি। অফিসের কাজের চাপে খুব বেশি, তাই কাজ করতে পারি নি। এটিই প্রধান কারণ। আর ছোটপর্দায় অনেক নতুন মুখের সমাগম দেখা যাচ্ছে। এত বেশী নতুনের আগমন হয়েছে যে, তাদেরকে চেনাই দুষ্কর। সবাই শুধু পয়সার পেছনে ছুটছে। সৃজনশীলতার পেছনে আমাদের কোন ঝোঁক নেই। আমাদের দেশ ছোট তো, তাই এখানে এর চেয়ে আর বেশী আশা করা যায় না। সেটা সম্ভবও নয়। এজন্যও অনেকটা কাজ কমিয়ে দিয়েছি। প্রথম ছবি মুক্তি পেলে এতে যেন দর্শকদের উপস্থিতি বেশী থাকে, সেজন্যও টিভি পর্দায় উপস্থিতি কমিয়ে দিয়েছিলাম।
এখন কী কী কাজ করছেন?
নিজের পরিচালনায় 'পুরো রাত আর অর্ধেক চাঁদ' টেলিফিল্মের শুটিং, মোহন খানের নাটক 'রূপকথার রাজকন্যার গল্প'
আর একুশের ধারাবাহিক 'টমটম' ব্যাস। এছাগা অফিসের কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছি।
আপনার অভিনীত নাটক, টেলিফিল্ম ও সিরিয়ালের সংখ্যা কত?
এটা তো কঠিন প্রশ্ন রে ভাই! সেই ১৯৯৪ সাল থেকে গত ১৫ বছরে প্রায় ৪০০টির বেশী নাটক, সিরিয়াল আর টেলিফিল্মে কাজ করেছি।
'মেঘের কোলে রোদ'-এ অভিনয় প্রসঙ্গে সম্পর্কে কিছু বলুন।
আমার বহুদিনের স্বপ্ন, ছবিতে অভিনয় করা। ছবিটি করার পর থেকে আশায় আশায় বুক বেঁধে থাকতাম, মানুষ ছবিটি দেখে যেন বলতে পারে 'ছবির মত ছবি হয়েছে'। সত্যি বলতে কি, ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর থেকে পরিবারের সবাইকে নিয়ে দেখছে সাধারণ দর্শক মহল। এই ছবির শুটিংয়ে, আমরা মালয়েশিয়ায় যখন কাজ করছিলাম, তখনও মনে হয়েছে একটি পরিবারের মতোই আমরা কাজ করছি। পরিচালক নারগিস আপা (নারগিস আক্তার) অনেক ভালো মানুষ। রিয়াজ, পপি সবাই-ই অনেক ভালো বন্ধুর মত আমাকে সাহায্য করেছে। সবকিছু মিলে অনেক ভাল লেগেছে কাজটি। আর্টফিল্মে কাজ করতে চাই না। বানিজ্যিক ফিল্মেই কাজ করতে চাই যদি তা মানসম্মত হয়।
চলচ্চিত্রে নিয়মিত হওয়ার চিন্তা আছে?
না, আমার সেরকম কোন ইচ্ছে নেই। আমি আমার মত করে কাজ করে যেতে চাই। ভাল লাগলে চলচ্চিত্রে অভিনয় করব।
ছোটবেলায় কী হওয়ার স্বপ্ন ছিল?
পাইলট হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান হওয়ায় তাদের অনুমতি ছিল না। তাই পাইলট আর হওয়া হল না। তাই পা বাড়ালাম এই জগতে।
অভিনয় করার জন্য পরিবার থেকে কেমন সহযোগিতা পেতেন? বিয়ের পরে প্রিয়া ডায়েসের সহযোগিতা কেমন পাচ্ছেন?
ফ্যামিলি থেকে শুধুমাত্র বড় বোনের সাপোর্ট পেতাম। অন্যরা তেমন উৎসাহী ছিল না। বিয়ের পরে প্রিয়ার উৎসাহ আরও বেশী পেয়েছি। বিশেষ করে শুটিংয়ে কোন ড্রেস পরব-এটা প্রিয়াই ঠিক করে দেয়।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা?
ভবিষ্যত পরিকল্পনা (একটু ভেবে)- বাংলাদেশের মতো জায়গায় কোন নির্দিষ্ট পরিকল্পনা না করেই চলা যায়। তবে আমার ভবিষ্যৎ টার্গেট হচ্ছে, একটি হলেও হলিউডের সিনেমা করব। এজন্য বায়োডাটাসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু তৈরি করেছি। হ্যাঁ, এখন লক্ষ্য একটাই, হলিউডের ফিল্মে কাজ করা।
সুত্র - গ্লিটস/১৬ আগস্ট ২০০৮
No comments:
Post a Comment