হাবিব বললেন...
পপ গায়ক ফেরদৌস ওয়াহীদ ও রোকসানা ওয়াহীদের সংসারে একমাত্র সন্তানটির নাম হাবিবুল ওয়াহীদ ওরফে হাবিব ওয়াহীদ। পূর্ব পরিচিতরা এখনও তাকে হাবিব বলেই ডাকে।
'কৃষ্ণ' গানটির রিমিক্স করে সঙ্গীতে হাবিবের পরিচিতি আসে। ২০০৩ সালে তার সঙ্গীত পরিচালনায় লোক সঙ্গীতের রিমিক্স অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। কৃষ্ণ গানটির জনপ্রিয়তার কারণে তিনি অ্যালবামটিরও নাম রাখেন 'কৃষ্ণ'।
২০০৪ সালে হাবিব আরও একটি লোক গানের রিমিক্স অ্যালবাম প্রকাশ করে। দ্বিতীয় এই অ্যালবামটির নাম 'মায়া'।
২০০৫ সালে 'বাংলা লিংক' মোবাইল প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতিটি প্যাকেজের সাথে 'ময়না গো' উপহার দেয়। এই অ্যালবামটিও হাবিবের তত্ত্ববধানে তৈরি হয়। তবে এটি ছিল মিশ্র অ্যালবাম। পরে অ্যালবামটি বিক্রির জন্য বাজারে ছাড়া হয়।
'ময়না গো' অ্যালবামে হাবিবের গাওয়া 'দিন গেল' গানটি বেশ জনপ্রিয়তা পায়। এরপর ২০০৬ সালে প্রথমবারের মত চলচ্চিত্রে গান করেন হাবিব। নিজের সুর ও সঙ্গীতে হৃদয়ের কথা ছবির সেই জনপ্রিয় গানটি হল 'ভালোবাসবো বাসবোরে বন্ধু'
পরে চন্দ্রগ্রহণ, আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা ও আমার আছে জল ছবিতে গান করেন তিনি। ছবিগুলোর এখনও কাজ চলছে।
২০০৬ সালে হাবিব নিজের জন্মদিন উপলক্ষে ১৫ অক্টোবর প্রকাশ করেন তার প্রথম একক অ্যালবাম 'শোন'। আগের অ্যালবামগুলোতে লোক সঙ্গীতের রিমিক্স থাকলেও 'শোন' অ্যালবামের সবগুলো গানই মৌলিক এবং হাবিবের নিজের কণ্ঠে গাওয়া।
যারা মনে করতেন হাবিব শুধু লোক সঙ্গীতের রিমিক্স করেই সঙ্গীতাঙ্গনে টিকে থাকবেন, তাদের ধারণা ভুল প্রমাণিত হয় এই অ্যালবামের মাধ্যমে। প্রযোজনা সংস্থাগুলোর মতে ২০০৬ সালের সর্বাধিক বিক্রিত অ্যালবাম ছিল এটি।
অবশ্য 'শোন' অ্যালবামের আগে বেশ কয়েকটি নাটক ও চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনা করে সঙ্গীতাঙ্গনে নিজের আসনটা আগেই পোক্ত করে নিয়েছিলেন।
এছাড়া গত কোরবানীর ঈদে হাবিবের সুর ও সঙ্গীতে প্রকাশিত হয় শিরিনের একক অ্যালবাম 'পাঞ্জাবীওয়ালা'। এটাও তরুণ শ্রোতা মহলে বেশ আলোচিত হয়।
এই বছর ১১ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হল হাবিবের দ্বিতীয় একক অ্যালবাম 'বলছি তোমাকে'।
হাবিব এই অ্যালবামের মাধ্যমে কাকে কী বলতে চেয়েছেন! সেটা জানতেই গ্লিটস এর পক্ষ থেকে হাবিবের মুখোমুখি হয়েছিলেন অনুরূপ আইচ।
বলছি তোমাকে অ্যালবামে আপনি কাকে কী বলতে চেয়েছেন?
হাবিবঃ আমার অ্যালবাম যারা শুনবেন, তারাই বুঝে যাবেন আমি কাকে কী বলতে চেয়েছি।
'শোন' অ্যালবামটি থেকে এই 'বলছি তোমাকে' অ্যালবামটির মধ্যে পার্থক্য কী?
হাবিবঃ 'শোন' অ্যালবামটির আগে আমার যে ধরণের গান জনপ্রিয়তা পেয়েছে, সেই ধরণের গান থেকে কয়েকটা আলাদা ধরণের গান দিয়েছিলাম প্রথম অ্যালবামটিতে। বলতে পারেন এক্সপেরিমেন্টাল অ্যালবাম ছিল ওটা। যদিও রিস্ক ছিল। কারণ আমার যে ধরণের গান শুনে শ্রোতারা অভ্যস্ত সে ধরণের গান খুব একটা ছিল না 'শোন' অ্যালবামটিতে। তবে গানগুলো ছিল মেলোডিয়াস। শ্রোতারা ভালোভাবেই গ্রহণ করে অ্যালবামটি। ফলে উৎসাহ পেলাম। তাই 'বলছি তোমাকে' অ্যালবামেও প্রথম অ্যালবামের মত বেশ কয়েকটি মেলোডিয়াস গান করেছি। তবে এটি এক্সপেরিমেন্টাল নয়। কারণ ভালবাসা নিয়েতো আর এক্সপেরিমেন্ট করতে পারিনা। অ্যালবামের সবগুলো গানই চরম হৃদয়স্পর্শী প্রেমের গান। এটি প্রকাশও পেয়েছে ভালবাসা দিবস উপলক্ষে।
'বলছি তোমাকে' অ্যালবামের জন্য প্রযোজনা সংস্থা সঙ্গীতার কাছ থেকে ২৩ লাখ টাকা নিয়েছেন। এটা বাংলাদেশের সঙ্গীতের ইতিহাসে অ্যালবাম বিক্রির ক্ষেত্রে রেকর্ড। আপনার সম্পর্কে অভিযোগ হচ্ছে এরকম উচ্চ পারিশ্রমিক ছাড়া নাকি আপনি কাজ করেন না। এটা কি সত্যি?
হবিবঃ সম্প্রতি আমি সিডর দূর্গতদের জন্য একটি গান করেছি। গানটি এখন বিভিন্ন চ্যানেলে ফিলার হিসেবে প্রচারিত হচ্ছে। খবর নিয়ে দেখুন, এই গানটির জন্য আমি এক টাকাও নেইনি। যারা আমার কাজের বিনিময়ে কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করবে, তাদের কাছ থেকে আমার প্রাপ্য পারিশ্রমিক নেব না কেন!
আমিতো মনে করি এতদিন ধরে এদেশের বিনোদন প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থাৎ অডিও কোম্পানিগুলো, বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলো এবং ফিল্ম প্রোডাকশনগুলো সঙ্গীত পরিচালক বা শিল্পীদের ঠকিয়েছে। এই সব প্রতিষ্ঠান এতদিন যে ব্যবসা করেছে, তার দশ ভাগও শিল্পীদের দেয়নি। আর শিল্পীরাও এসব নিয়ে মাথা ঘামাননি। কিন্তু আমি মনে করি শিল্পীদের এসব ভাবা উচিত। একজন শিল্পী বা সঙ্গীত পরিচালক যদি অর্থনৈতিক ভাবে সন্তুষ্ট না হন, তবে তিনি সৃষ্টি করবেন কীভাবে!
সঙ্গীতে হাতেখড়ি কার কাছে?
হাবিবঃ সত্যি বলতে তেমন কেউ না। আসলে আব্বুর কারণে বাসাতেই গান-বাজনার পরিবেশ ছিল। ছোটবেলায় আমি ফুটবল, ক্রিকেট খেলার চাইতে কি-বোর্ড নিয়ে খেলতে পছন্দ করতাম বেশি। একদিন আব্বুর একটা গানের সুর কি-বোর্ড এ তুলে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলাম। তখনও আমি কি-বোর্ড এর কোন ব্যকরণ জানতাম না।
আমাদের ধানমন্ডির বাড়িতে বিএমডিআই নামে একটা গানের স্কুল ছিল। সেই স্কুলের দুই শিক্ষক পিংকু ও রকেট ভাই। তখনও আমি বেশ ছোট। আর ওই শিক্ষক দুজন ছিলেন আমার বাবার বয়সের সমান। তবুও তাদের আমি ভাইয়া ভাইয়া করতাম। আর তারাও মজা করতে দিয়ে আমাকে মাঝে মাঝে কি-বোর্ড বাজানো শেখাতেন। সেই থেকে শুরু।
যখন ক্লাস এইট কি নাইনে পড়ি তখন পিংকু ভাই, বালাম ও রিপনকে বলে আমাকে রেইনিগেইডস ব্যান্ডের সদস্য করে দেন। এভাবেই সঙ্গীতে পথ চলা শুরু।
আপনার পছন্দের গায়ক গায়িকা কারা?
হাবিবঃ সবার আগে আমার বাবার নাম আসবে, পপ গায়ক ফেরদৌস ওয়াহীদ। এছাড়া সাবিনা ইয়াসমীন, কুমার বিশ্বজিৎ, আইয়ূব বাচ্চু ও জেমস এর গান আমার খুব ভালো লাগে। এক সময় আমি 'মাইলস' এর গানেরও ভক্ত ছিলাম।
প্রিয় সঙ্গীত পরিচালক?
হাবিবঃ এআর রহমান। তিনি আমার আইডল। দেশের মধ্যে পছন্দের তালিকায় প্রথম স্থানে আছে অর্ণব। এই প্রজন্মের সঙ্গীত পরিচালকদের মধ্যে সে বেশ আলাদা। এছাড়া ফুয়াদ নাসের বাবু। তার সঙ্গীতে পশ্চিমা ধাঁচের আঁচটা অসাধারণ লাগে। বালাম এর গানের ছন্দও খুব পছন্দ আমার। আমিতো মনে করি বালাম একজন কমপ্লিট মিউজিশিয়ান।
এই বছর আপনার কাছ থেকে আর কোন অ্যালবাম পাবে কি শ্রোতারা?
হাবিবঃ আগামী ঈদ উপলক্ষে আমার আর আব্বুর একটা দ্বৈত অ্যালবাম করার ইচ্ছে আছে। আর তৃতীয় একক অ্যালবাম প্রকাশ করতে চাই আগামী বছর ভ্যালেন্টাইন্স এ।
ভালবাসা দিবসেই যখন অ্যালবামগুলো প্রকাশ করছেন, তাহলে এবার নিজের প্রেমের জীবন নিয়ে কিছু বলুন।
হাবিবঃ কী বলব ! প্রেমই তো নেই!!
কী বলছেন! তাহলে পত্রপত্রিকায় আপনার আর মডেল-নৃত্যশিল্পী মোনালিসার প্রেম নিয়ে যা ছাপা হয়েছে তা সব মিথ্যা?
হাবিবঃ দেখুন দুজন শিল্পীর মধ্যে ভালো সম্পর্ক হলেইতো সবাই সেটাকে প্রেম বলে ভেবে নেয়। কয়েকটা পত্রিকাতো আমাদের বিয়েও দিয়ে দিয়েছে।
দুই জন দুই মাধ্যমের শিল্পী। ভালো বন্ধুত্বটা তাহলে হল কীভাবে?
হাবিবঃ বছর খানেক আগে চ্যানেল ওয়ানে আমার 'দিন গেল' গানটির ভিডিও চিত্র প্র্রচার করা হয়। তাতে আমার সঙ্গে মডেল হয়েছিলেন মোনালিসা। সেখানেই মোনালিসার সঙ্গে আমার মোলাকাত। এরপর থেকেই তাকে আর আমাকে নিয়ে গুঞ্জন জোরালো হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে যখনই কোন পত্রিকায় আমাদের দুজনকে নিয়ে গুজব ছাপা হত, সেই দিনই এই বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে আলাপ হত। এই করতে করতে বর্তমানে আমাদের মাঝে ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে।
অনেকেরতো ধারণা মোনালিসার সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কারণে আপনার প্রথম বিয়ে ভেঙ্গে গেছে।
হাবিবঃ এটা সম্পূর্ন ভুল কথা। মোনালিসার সঙ্গে পরিচয়ই হয় আমার ডিভোর্সের প্রায় দুই মাস পর।
তালাকের কারণটা জানা যাবে?
হাবিবঃ মূল কারণ ছিল আমার, সারাদিন সঙ্গীত নিয়ে পড়ে থাকা। 'কৃষ্ণ' অ্যালবামটি প্রকাশের পরপরই লুবায়নার সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর পর হঠাৎ করে আমার কাজের চাপ এতই বেড়ে গিয়েছিল যে, স্ত্রীকে আমি সময় দিতে পারতাম না।
তখন আমরা থাকতাম গুলশানে। আর আমার স্টুডিও ছিল ধানমন্ডিতে। অনেকদিন আমি স্টুডিওতে কাজ করতে করতে ঘুমিয়ে পড়তাম। পরদিন সকালে আবার ব্যস্ত হয়ে যেতাম সঙ্গীত নিয়ে। আমাদের সম্পর্কের ভাঙ্গনের পিছনে লুবায়নার কোন দোষ নেই। সেও আমাকে দোষী করে না। একসঙ্গে সংসার না করলেও আমাদের মধ্যে এখনও সুসম্পর্ক আছে।
আবার কি বেল তলায় মানে দ্বিতীয়বার বিয়ে করার ইচ্ছে আছে কী?
হাবিবঃ (একটু হেসে) ইচ্ছেতো ছিল ৩/৪ বছর পর বিয়ে করব। তবে বিয়ের ভাবনাটা আম্মুকে দিয়ে দিয়েছি। আম্মু যেদিন আমার বিয়ে ঠিক করবে, সেই দিনই বিয়ে করব।
অনেকেই অভিযোগ করেন আপনার সঙ্গে কোন কাজের কথা বলতে গেলে নাকি আপনি আব্বু আম্মুর উপর ভার চাপিয়ে দেন। সব সময় সব কাজে আব্বু - আম্মু করার কারণ কী?
হাবিবঃ বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনে আমার আব্বু অনেক বড় অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মানুষ। আমার আমার বিবেচনায়, আম্মু মানব সংসারে একজন অভিজ্ঞ মানবী। আর জগত সংসারের অনেক কিছু নিয়ে আমার চিন্তাভাবনা গভীর নয়। তাই সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আমি আব্বু আম্মুর শরণাপন্ন হই।
তারা আমাকে যখন যে কথা বলেছেন এ পর্যন্ত সব কিছু একশত ভাগ মিলেছে। আমি বুঝেছি, তাদের ছাড়া আমি জীবনে এক পাও এগুতে পারব না।
সুত্র - গ্লিটস/৭ এপ্রিল ২০০৮
No comments:
Post a Comment