6.4.09

Abul Hayat

"যে অভিনেতা তার চরিত্রের ভবিষ্যৎ জানে সেই ভালো অভিনেতা" - আবুল হায়াত

Abul_Hayat_15সেই দশ বছর বয়স থেকে তিনি শুরু করেছিলেন অভিনয়। তারপর থেকে অনবরত এগিয়ে চলা। কী মঞ্চ, কী ছোটপর্দা, কী বড়পর্দা - প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সমান সফল। এক জীবনে মানুষের ভালবাসা, সম্মান এবং খ্যাতি সবই পেয়েছেন আবুল হায়াত। অর্জন করেছেন বাচসাস, বাবিসাস, এমনকি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারও। এবারের আয়োজন আবুল হায়াতের সাক্ষাৎকার...।


কেমন আছেন?
জ্বি, ভালো আছি।

এখন কোন নাটকে অভিনয় করছেন?
শাখাওয়াত আল মামুনের 'ইস্‌কুল' নাটকে।

ইস্‌কুল নাটকের গল্পটি কেমন?
আমার চেয়ে পরিচালক ভালো বলতে পারবেন। আগে নাটকের গল্প জেনে তারপর কোনো অভিনেতা অভিনয় করতেন। কিন্তু এখন তারা স্পটে এসে নিজের চরিত্র সম্বন্ধে একটু ধারণা নিয়েই অভিনয় শুরু করেন। ফলে নাটকের গল্প বলা মুশকিল।

এই নাটকে আপনার চরিত্র সম্পর্কে কিছু বলুন।
'ইস্‌কুল' নাটকে আমি একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের চরিত্রে অভিনয় করছি। ছাত্র-ছাত্রীদের যে অনেক বকাঝকা করে। মারে। সবাই তাকে খুব ভয় পায়। সে নিজেও খুব বদরাগী স্বভাবের।

আমাদের টিভি নাটকে এখন অনেক নবীন শিল্পী কাজ করছেন। তাদের কাজের মান কেমন? একজন প্রবীণ ও অভিজ্ঞ অভিনেতা হিসেবে তাদের সাথে কাজ করাটা কেমন উপভোগ করেন?
এ কথা পুরোপুরিই সত্য, এখন নাটকে নতুনদের জোয়ার চলছে। নাটকে নতুন শিল্পীদের আগমনকে আরো বেশি করে উৎসাহ দেওয়া উচিত। তারা যত বেশি কাজ করবেন নাটকের মান তত বেশি ভালো হবে। তবে প্রবীণ ও নবীনদের কাজের অন্যতম পার্থক্য হলো, আগে কোন নাটকের শুটিং হলে তার আগে রিহার্সেল করার সুযোগ পাওয়া যেত। এখন আর সেই সুযোগ নেই। এটা অবশ্য পরিচালকের নিজস্ব ব্যাপার।

পরিচালকের প্রশ্ন যখন আসলো তখন বলুন- নতুন পরিচালক যেমন ইফতেখার ফাহমি বা রেদওয়ান রনি কিংবা অন্যদের কাজের পদ্ধতি কেমন?
যে অভিনেতা তার চরিত্রের ভবিষ্যৎ জানে সেই ভালো অভিনেতা। একজন ভালো অভিনেতা অভিনয় করলে, তার অভিনয়গুণে নাটকটি কখনো গতিহারা হবে না। আমরা যখন যৌবনে অভিনয় করতাম এই অভিনয়গুণের দিকে খুব খেয়াল রাখা হতো। আমার মনে হয়, এখন এটি নেই। এখন পরিচালকরা সেটে স্ক্রিপ্ট দেয়। সেখানে দুই একবার ইমপ্রোভাইজেশন শেষে তাকে অভিনয় করতে হয়। ফলে... নাটকের মান কমে যায়। অবশ্য এই প্রজন্মের মেধা তীক্ষ্ণ। তারা অনেক বেশি ট্যালেন্টেড। ব্যক্তিগতভাবে আমি তাদের সম্মান করি। তবে তারা বড় বেশি এক্সপেরিমেন্টাল।

এখন একক নাটকের সংখ্যা কমে গেছে। পাশাপাশি বেড়ে গেছে মেগাসিরিয়াল, ডেইলি সোপ প্রভৃতির নির্মাণ। এর কারণ কি?
একমাত্র বাণিজ্যই এর কারণ। এর ফলে শিল্প বাণিজ্যের কাছে মার খেয়ে যাচ্ছে।

এর প্রতিকার কী?
শুধুমাত্র অর্থের কারণে অনেক চ্যানেল খারাপ নাটক প্রচার করে। তাই ভালো নাটক প্রচারের জন্যে চলচ্চিত্রের মতো নাটকেও সেন্সরশিপ আরোপ করা উচিত।

আপনি তো মঞ্চে অভিনয় করতেন। কিন্তু এখনকার শিল্পীদের বেশিরভাগই মঞ্চের বাইরে থেকে আসছেন। এ সম্পর্কে বলুন।
মঞ্চ হলো অভিনয় শেখার জায়গা। মঞ্চ ডিসিপ্লিন, কমিটমেন্ট, ডিভোশন শেখায়। মঞ্চে অভিনয় করলে সে অভিনেতার একটা বেটার সাইড থাকবেই। এখনকার শিল্পীদের অনেকই দারুণ প্রতিভাবান। কিন্তু তারাও কিছুদিন নাটক, চলচ্চিত্র প্রভৃতিতে অভিনয় করে পরে যায় মঞ্চে কাজ শিখতে। মঞ্চ অবশ্যই দরকারী।

আগে আপনাকে প্রায়ই বড়পর্দায় দেখা যেত। কিন্তু এখন সেভাবে আর দেখা যায় না। কারণ কী?
আসলে বড়পর্দা, ছোটপর্দা বলে কোনো বিষয় নেই। পেশাদার অভিনেতা অভিনয়ের সবক্ষেত্রেই ভালো করার সামর্থ্য রাখেন। নিয়মিতভাবে নাটকে অভিনয়, নাটক লেখা ও নির্মাণে ব্যস্ত সময় পার করার পর চলচ্চিত্রে এসে মানসিকভাবে এডজাস্টমেন্ট হয়ে উঠে না। এখন অবশ্য গুলজার হোসেনের পরিচালনায় 'নিঝুম জঙ্গল' নামের একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করছি।

এখনকার একটি ট্রেন্ড হচ্ছে আঞ্চলিক ভাষায় নাটক তৈরি। নাটকের ক্ষেত্রে এর প্রভাব কেমন পড়ছে?
নাটকে আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার অবশ্যই ভালো। এর কিছু সুফলও আছে। তবে হয় প্রমিত ভাষা নয়তো পুরোটাই আঞ্চলিক ভাষায় নাটক নির্মিত হতে হবে। তবে দর্শককে মজা দেয়ার জন্যে দু'একটা চরিত্র আঞ্চলিক ভাষার হতে পারে।

আমাদের তরুণ প্রজন্ম বাংলার চাইতে হিন্দি মেগাসিরিয়ালে বেশি আসক্ত। এর কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?
ভারতের নাটক, মেগাসিরিয়ালগুলোতে চাকচিক্য আছে। আছে মানুষকে ধাঁধায় ফেলার ক্ষমতাও। তারা কল্পনার উপর দাঁড়িয়ে নাটক বানায়। কিন্তু এদেশে নাটক বাস্তবতার ভিত্তিতে তৈরি করা হয়। তারপরও খেয়াল করলে দেখবেন, ওদের মেগা সিরিয়ালের জনপ্রিয়তা এখন অনেক কমে গেছে। আর আমাদের নাটকের মান নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ-ই নেই।



সুত্র - গ্লিটস/১৬ জুলাই ২০০৮

No comments:

Post a Comment